জালালিয়া সিনিয়র ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসা হযরত শাহ জালাল (রহ.) ও ৩৬০ আওলিয়ায়ে কেরামগণের পদস্পর্শে ধন্য ১৩৩ বছরে পদার্পণকৃত একটি ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী বিদ্যাপিঠ। ইতিহাস তথ্যানুযায়ী এটি১৮৮৮ ইং সনে নিজ জালালপুর (পূর্বভাগ) সোজাদিগীর (খোজাদিঘী) দক্ষিণ পারে পূর্বভাগের সম্ভ্রান্ত মুসলিমপরিবারের মরহুমা মঈজা বানু নামীয় অত্যন্ত ধার্মিক একজন মহিলা প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।পূর্বভাগ হতে স্থানান্তরের কারণ: মরহুমা মঈজা বানু মৃত্যুবরণ করলে তাঁর অবর্তমানে মাদরাসাটির তদারকিরঘাটতি দেখা দিলে এক পর্যায়ে মাদরাসার অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়। এমনকি শেষ পর্যন্ত বন্ধওহয়ে যায়। এদিকে এলাকার জনগণ মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব দিন দিন উপলব্ধি করতে থাকেবিধায় সকলের সমন্বয়ে পূর্বভাগ থেকে স্থানান্তর করে বড়ভাগা নদীর দক্ষিণ তীরে কর্মকার বাড়ির পাশে স্থাননির্ধারণ করেন।বেশকিছুদিন মাদরাসাটি সেখানে চালু থাকার পর হঠাৎ একদিন ব্রিটিশ সরকারের একজন উচ্চ পর্যায়েরপরিদর্শক মাদরাসা পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু মাদরাসাটি কর্মকার বাড়ির পাশে থাকায় এবং সরকারিবিধিমোতাবেক মাদরাসাটির অবকাঠামো ঠিক না থাকায় তিনি পরিদর্শন রিপোর্টে নেতিবাচক মন্তব্য করেযান, ফলে মাদরাসাটির অস্তিত্ব পুনরায় হুমকির মুখে পড়ে যায়। মাদরাসা বোর্ডের কয়েকজন হৃদয়বান সুউচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাগণের সুপরামর্শে বড় ভাগার দক্ষিণ পার থেকে মাদরাসার বর্তমান জায়গায় একাডেমিক ওপ্রশাসনিক কার্যালয় স্থানান্তর হয়।একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্বীকৃতি লাভ: মাদরাসাটি প্রথম দিকে সীলং শিক্ষা বোর্ডের অধিনে ছিল। ভারতবিভক্তির পর ১৯৫৬ সালে আলিম জামাতের স্বীকৃতি লাভ করে এবং ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধিনে ফাযিল ক্লাস খোলার অনুমতি পায়। ১৯৯৫ সালে বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে২০০২ সালে ফাযিল এমপিও ভূক্ত হয়ে পা পা করে উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়।১৮৮৮ সালে নিজ জালালপুরের চৌধুরী পরিবারের মোছাঃ মঈজা বানু, পাতারিয়ার মৌলভী আব্দুল মান্নানচৌধুরীর সার্বিক সহযোগিতায় সোজাদিঘীর (খোজাদিঘী) উত্তর পারে একটি জুনিয়র মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেনএবং উক্ত মাদরাসা পরিচালনার জন্য মৌলভী আব্দুল মান্নান চৌধুরীকে নিযুক্ত করেন। কথিত আছে যে,মোছাঃ মঈজা বানুর কোন সন্তানাদি ছিল না, অথচ প্রচুর ধন-সম্পত্তি ছিল। সম্পত্তির আয়ের দ্বারাই উচ্চমাদরাসাটি পরিচালিত হত। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর মৌলভী আব্দুল মান্নান চৌধুরীরমৃত্যু হলে ভদ্র মহিলা পাতারিয়ার ক্বারী শরাফত আলীর উপর মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। এভাবেদীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর মোছাঃ মঈজা বানু হঠাৎ ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের কিছুদিন পূর্বে কারীশরাফত আলীর নামে মাদরাসাটি পরিচালনা করার জন্য তান সমস্ত জমি-জামা হস্থান্তর করেন। ক্বারী শরাফতআলী কিছুদিন মাদ্রাসাটি পরিচালনা করার পর তিনি এখান থেকে চলে যান। যতটুকু জানা যায় মাদরাসাপরিচালনার জন্য যে সমস্ত জমিজমা ছিল, তা ক্বারী শরাফত আলীর দায়িত্বপালনরত অবস্থায় বেহাত হয়েযায়। তখন মাদরাসার প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এমন কি দীর্ঘদিন বন্ধও ছিল। অনেক দিন এভাবে যাওয়ারপর ঐ পরিবারের জনাব খলিলুর রহমান চৌধুরী অসহায় হয়ে সমস্ত এলাকাবাসীকে আহবান জানান, মাদরাসাপরিচালনা করার জন্য। পরে এলাকাবাসী নিম্নলিখিত একটি কমিটি গঠন করে মাদরাসা পরিচালনার জন্যসমস্ত দায়দায়িত্ব অর্পন করেন।(১) মোঃ খলিলুর রহমান (পূর্বভাগ) সেক্রেটারী, (২) মোঃ মনসীব আলী চৌধুরী (সব্দলপুর) সদস্য, (৩)মোঃ মদরীস আলী (খতিরা) সদস্য, (৪) শাহ মোঃ আজফর আলী (রায়খাইল) সদস্য, (৫) মুনসী আব্দুললতিফ (শেখপাড়া) সদস্য, (৬) সৈয়দ মোবারক আলী (মিরারগাঁও) সদস্য, (৭) মুনসী ছৈদ মিয়া(কাদিপুর) সদস্য, (৮) মোঃ আম্বর আলী শিকদার (রায়খাইল) সদস্য। নবগঠিত এই পরিচালনা কমিটিএলকার আপামর জনসাধারণের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতায় মাদরাসার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতেলাগলেন। অবশেষে একটি সাধারণ সভায় আপামর জনতার সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে মাদরাসার ঘরটি পূর্বভাগথেকে স্থানান্তরিত করে জালালপুর বাজারের বড়ভাগা নদীর নিকটস্থ (বর্তমান মাদরাসার মাঠ) একটি জায়গাঠিক করে ঘর নির্মাণ করেন। এই স্থায়ী মাদরাসায় হযরত শাহজালাল মজররদে ইয়ামনির নামানুসারে “ জালাললীয়া সিনিয়র মাদরাসা" নামকরণ করা হয়।পূর্বভাগ থেকে জালালপুর বাজারে মাদরাসাটি স্থানান্তরিত করার পর মৌলভী হারিছ আহমদ সাহেব দীর্ঘ ৪০বৎসর মাদরাসার সুপারের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে এক বৎসর মৌলভী আব্দুল মুকিত সাহেবউক্ত মাদরাসার সুপারের দায়িত্ব পালন করেন। এবং ঐ বৎসরই তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক উক্তজুনিয়র মাদরাসাকে একটি সিনিয়র মাদরসায় রূপান্তরিত করা হয়। এরপর মাওলানা আব্দুল আজিজ সাহেব(বাদেশপুর) দীর্ঘ ১৭ বৎসর একাধারে অত্র মাদরাসার সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এখান থেকেচলে যাওয়ার পর মাওলানা আব্দুল জলিল সাহেব সহ বেশ কয়েকজন মাওলনা সুপারের দায়িত্বে ছিলেন।অবশেষে দেশবাসী এক সভায় মাওলানা হুসাইন আহমদ সাহেবের উপর সুপারের দায়িত্ব অর্পন করেন, তিনি৫ বৎসর এই দায়িত্ব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করেন। অতঃপর তিনি বার্ধক্যজনতি কারণে মাওলানা আব্দুলকাদির সাহেবের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭৭ সালের ২৩ শে অক্টোবরএলকার সর্বস্থরের জনগণের এক সভায় উক্ত মাদরাসাটি পরিচালনা করার জন্য এলাকার যুব সমাজকেআহবান করেন। তখন কয়েছ আহমদের প্রস্তাবনায় উক্ত যুব সমাজের নাম রাখা হয় “ জালালপুর আঞ্জুমানেইসলামী খেদমতগার" এবং নিম্নলিখিত সদস্যবৃন্দকে নিয়ে মাদরাসা পরিচালনার জন্য একটি শক্তিশালীকমিটি গঠন করা হয়।(১) সভাপতি, মোঃ নুর মিয়া (দাউদপুর), (২) সহ-সভাপতি, ফজলুর রহমান (খতিরা), (৩)সহ-সভাপতি, মোঃ মঈনুল ইসলাম (শেখপাড়া), (৪) সহ-সভাপতি, মোঃ মোতাহির আলী (শেখপাড়া),(৫) সাধারণ সম্পাদক, কয়েছ আহমদ (মিরারগাঁও), (৬) সহ-সাধারণ সম্পাদক, মোঃ হারুনুল ইসলাম(শেখপাড়া), (৭) সাংগঠনিক সম্পাদক, শাহ মোঃ আনসার আলী (রায়খাইল), (৮) অর্থ সম্পাদক, মৌলভীআব্দুল ওয়াহিদ (সিলেট), (৯) সহ-অর্থ সম্পাদক, আব্দুল বারী (রায়খাইল), (১০) প্রচার সম্পাদক,আজিজুর রহমান (মহিষপুর), (১১) তথ্য সম্পাদক, মাহবুব আলম (বাদেশপুর), (১২) ধর্মীয় সম্পাদক,